রমজানের ভুল ধারণা ( রোজা রেখে রক্তদান প্রসঙ্গে )

রমজানের ভুল ধারণা - ১ 

 [রোজা রেখে রক্তদান প্রসঙ্গে]


রমজানের সময় মুসলিম নারী-পুরুষ সকলেই চায় আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন। একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করে তাদের চলা-ফেরা, আচার-ব্যবহার সহ জীবনের যে কোন পদক্ষেপে। সকলেরই আশা থাকে এই রহমতের মাস থেকে বাড়তি কিছু কামিয়ে নেয়া। তাই অনেক সময় অনেক স্বাভাবিক কাজের ব্যাপারেও সন্দেহ উঁকি দেয় মনে যে “রোজা রেখে এটা করা যায় কি?” তেমনই একটা সন্দেহ হচ্ছে “রোজা রেখে কি রক্তদান করা যায়?” এই নিয়ে আজকের লেখা...

শুরুতেই ইসলামের একটা মৌলিক ও সাধারণ সূত্র বলি। তা হচ্ছে “যা নিষিদ্ধ, হারাম বা অবৈধ নয় তা-ই জায়েজ”। অর্থাৎ যুগের পরিক্রমায় এমন কোন ব্যাপার সামনে আসল যেটা সম্পর্কে ইসলামে সরাসরি কিছু বলা নাই আবার আপাত দৃষ্টিতে ব্যাপারটিকে মানবজাতির জন্য ক্ষতিকরও মনে হচ্ছে না তাহলে ধরে নেয়া যায় যে ব্যাপারটি জায়েজ হবে। যেমন বলতে পারি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। যদিও এর দ্বারা ক্ষতির আশংকা আছে বা এরও খারাপ দিক আছে তবে ব্যক্তি চাইলে খারাপটাকে এড়াতে পারেন। নবী (সাঃ) এর সময়ে রক্তদানের সুযোগ বা concept ছিল না। তাই এ ব্যাপারে সরাসরি কোন কোরআন-হাদীসের দলীল পাওয়া যায় না। রক্তদানের বৈধতা ও রোজায় রক্তদানের বৈধতা নিয়ে নিচে আলোকপাত করা হল।

#কেউ কেউ মনে করেন রক্তদান করা হারাম। তাদের যুক্তি হচ্ছে ইসলামে অঙ্গদান করা অবৈধ। এ সম্পর্কে একজন মুফতি সাহেবের সাথে আলোচনা করেছিলাম এবং একই সাথে নেটে কিছু ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম যে, অঙ্গদাতার ক্ষতির আশংকা না থাকলে জীবিত অবস্থায় সে যে কাউকে তার অঙ্গ দান করতে পারবেন। কিন্তু তিনি অসিয়ত করে যেতে পারবেন না যেন মৃত্যুর পর তার অঙ্গ অমুককে দান করে দেয়ার জন্য। তাই এ কথা বলার অবকাশ নাই যে অঙ্গদান বা রক্তদান ইসলামে অবৈধ। তবে সকল আলেমের মতেই অঙ্গ বিক্রি বা রক্ত বিক্রি করা অবৈধ।

###এরপর আসি মূল টপিকে। রোজা রেখে রক্ত দেয়া যাবে কিনা? যারা এই প্রশ্নটি করেন আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে তারা রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না অথবা ওযু ভঙ্গের কারণ ও রোজা ভঙ্গের কারণের মধ্যে প্যাচ লাগিয়ে ফেলেন। রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে রক্ত বের হলে রোজা নষ্ট হয় এমন কোন পয়েন্ট নাই। রোজা ভাঙ্গে মূলত শরীরে কোন কিছু প্রবেশ করানো হলে। বমি হলে বা রক্তক্ষরণ হলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না।

মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রঃ) অনুদিত বুখারী শরীফের ১০০২ নম্বর হাদীসে বলা আছে যে হযরত আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাস করা হল রোজা রেখে শিঙ্গা লাগিয়ে শরীর থেকে রক্তপাত ঘটানোর ব্যাপারে নবী (সাঃ) এর কোন নিষেধ আছে কিনা। তিনি বলেছেন যে রোজাদারের দুর্বলতার আশংকা না থাকলে নবী (সাঃ) এর কোন নিষেধ নাই।

আরো অনেক সহীহ হাদিসের থেকে জানা যায় যে শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। শিঙ্গা লাগানোর মানে হচ্ছে গরু বা মহিষের শিং দিয়ে দেহের থেকে রক্ত বা পুঁজ বের করার পদ্ধতি। আর এই রক্ত বের করা হলে রোজাদার দুর্বল হতে পারে ফলে রোজাটা ছেড়ে দিতে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শিঙ্গা না লাগানোই উত্তম। বা বলা যায় রোজা রেখে রক্তদান না করা ভাল। যদি রুগির অবস্থা খুব বেশি খারাপ না হয় তাহলে ইফতারের পরে রক্তদান করতে পারেন। আপনার কষ্ট কম হবে।

রক্তদাতা যদি মনে করেন তিনি রক্তদানে অভ্যস্থ এবং দেহের থেকে ৪০০-৪৫- মিলি রক্ত নেয়ার পরেও তিনি শারীরিক ভাবে সবল থাকবেন এবং রোজাটি শেষ করতে পারবেন তাহলে রক্তদানে কোন বাধা নাই। রক্তদান করলে বা দেহের থেকে রক্তক্ষরণের কারণে রোজা নষ্ট হয় না। রক্ত দেয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই পানির তৃষ্ণা বেড়ে যায়। আর ডাক্তাররাও বলেন রক্তদানের পরে বেশি বেশি লিকুইড
খাবার খেতে। যেন রক্তের জলীয় অংশটা দেহে ফেরত আসে। তাই রোজা থেকে রক্ত দিলে আপনার হয়ত একটু বেশি পিপাসা লাগবে বা একটু বেশি কষ্ট হবে কিন্তু এর মাধ্যমে যদি একজন মুমূর্ষু রুগির জীবন বাঁচে তাহলে এইটুক কষ্ট করতে ক্ষতি কী?

রোজা রেখে রক্তদান সম্পর্কে এই বক্তব্য শুনতে পারেন এখান থেকে


তাই আপনার যদি রক্ত দেয়ার পরেও সারভাইভ করার কনফিডেন্স থেকে থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় রক্তদান করতে পারেন। যাদের স্বাস্থ্য ভাল বা ওজন তুলনামূলক বেশি তারা মনের জোর থাকলে নিশ্চিন্তে রক্ত দিতে পারেন। আপনাদের কোন রকম অসুবিধা হবার কথা না। রোজা রেখে রক্ত দেয়া একটু কষ্ট বিধায় জরুরি প্রয়োজনেও রক্তদাতা পাওয়া যায় না। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিত মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করা।

মানুষকে মানুষের রক্ত নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। রক্ত কারখানায় তৈরি করা যায় না।


For Buing Hosting: Visit: https://hostingbangladesh.com/billing/aff.php?aff=778

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুরস্কের কে এই ফতুল্লা গুলেন??? বিস্তারিত জানতে পড়ুন।

আল্লাহর সাথে কথোপকথন- পর্ব ১

পুলিশে নিয়গেই যেখানে দুর্নিতি ও অবক্ষয়। নিরাপত্তার প্রশ্ন আজ কোথায়??? কারা এই নিয়োগ প্রাপ্তরা?